“মরণ সাগর পারে তোমরা অমর,
তোমাদের স্মরি
নিখিলে রচিয়া গেলে আপনারই ঘর,
তোমাদের স্মরি
সংসারে জ্বেলে গেলে নব আলোক
জয় হোক, জয় হোক, তারি জয় হোক-”………
রবি ঠাকুরের উপরোক্ত ছত্রটি যুগ যুগান্ত ধরে নানা প্রাতে গহীন রাতে পথে প্রান্তরে নানা অভিঘাতে হয়েছে সম্পৃক্ত। তেমনি আজও কোন শুভক্ষণে বরষানয়নে হে দরদিমনা তোমারে স্মরি।
প্রতীপ ব্যানার্জী,আমাদের সকলের ডাক্তার বাবু ছিলেন বিরলমনা এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। কেন তিনি অন্য অনেকের থেকে আলাদা তা বলবো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যেমনটি তাঁকে পেয়েছিলাম।
সালটা ২০১০ । একটি এ্যলোপ্যাথিক ওষুধের বিক্রিয়ায় আমার সারা শরীরে Rash বেরিয়ে ছিল । সেই সময় কলকাতায় বাগবাজার অঞ্চলের একটা নার্সিংহোমে আমি ভর্তি ছিলাম । চলে যাচ্ছে একটার পর একটা দিন, রাতের পর রাত কাটছে অনিদ্রা থেকে অজানা শঙ্কায়। অসুখ সারা তো দূরস্থান ক্রমশঃ মনে হচ্ছে পৃথিবী থেকে সরে পড়বার উপক্রম। আমাদের চারজনের সংসারে গৃহস্থি যেখানে চালিকাশক্তি তিনিই অসুস্থ, কবে সুস্থ হবেন তার নামগন্ধ নেই, দুটো সন্তান তাদের লেখাপড়া গোল্লায় যেতে বসেছে। চাকুরে স্বামী, তিনিও পরপর ছুটি নিতে নিতে তার এই তহবিলও ফাঁকা হতে বসেছে। চতুর্দিক লন্ডভন্ড । এই যখন অবস্থা তখন নতুন করে শুরু হলো যন্ত্রণা আর না খাওয়ায় আরও দুর্বলতর হতে থাকলাম। কলকাতায় থাকলে কী হবে চিকিৎসার হাল হকিকত দেখে মনে হচ্ছিল আমি অস্তগামী শুকতারা। আর পারছিলাম না। বণ্ড দিয়ে নার্সিংহোম থেকে আমাকে বের করতে বললাম কিন্তু যাব কোথায় কোন ডাক্তারবাবুর কাছে, গন্তব্য জানিনা, এদিকে সারা গায়ে বসন্তের মতো উপসর্গ কিন্তু যদিও তা নয়। আমার এই অবস্থা দেখে আত্মীয়-স্বজন প্রত্যেকেই খুব দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন, ভয় পেয়ে গেছিলেন। এইরকম শোচনীয় যখন অবস্থা তখন রঞ্জিত পাল (সম্পর্কে আমার শ্বশুর মশাই ) বললেন কলকাতার নামী হোমিওপ্যাথি ডাক্তারবাবু প্রতীপ ব্যানার্জিকে একবার দেখাতে বললেন । পরিবারের লোকেরা রিস্ক বন্ড দিয়ে আমাকে নার্সিংহোম থেকে বার করে আনলেন । এরপর সেই দেবদূতরূপী আত্মীয় রঞ্জিত পাল এবং তাঁর কন্যা রিঙ্কু উদ্যোগ নিয়ে সব ব্যবস্থা করে ডক্টর
প্রতীপ ব্যানার্জীর কাছে আমাকে নিয়ে এলেন। পৌঁছলাম এলগিন রোডের চেম্বারে দেখলাম ডাক্তার প্রতীপ ব্যানার্জিকে। নাম শুনেছি কিন্তু ধন্বন্তরিকে সেদিন স্বচক্ষে দেখলাম। কী মার্জিত তাঁর ব্যবহার । এতটুকু অহং বোধ নেই। তাঁর ওষুধ খেয়ে শুরু করলাম শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে। কোন ইনজেকশন নেই গাদাগুচ্ছের
ওষুধের ঔদ্ধত্য নেই শুধু তরল প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে সরলভাবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠলাম। যমরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করে মৃত্যুপুরী থেকে ফেরত আনা নয় বরং আপন কুশলতায় নিপুনতার সাথে চিকিৎসা করে ফিরিয়ে আনলেন এক মৃত্যু পথযাত্রী রোগীকে। এ প্রসঙ্গে আরও বলা প্রয়োজন, মানুষটি এখন কায়িকভাবে আমাদের কাছে নেই তথাপি আমার কোন শারীরিক অসুস্থতা হলে তাঁর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বা চিকিৎসালয় থেকে তাঁরই উপদেশমতো ওষুধ নিয়ে এসে খাই এবং সুস্থ হই। এমনকি ২০২১ সালে যখন আমার পায়ের অপারেশন হলো কোয়েম্বাটুরের গঙ্গা হাসপাতালে তখন ওখানে বাধ্যতামূলকভাবে নানারকম এ্যলোপ্যাথিক ওষুধপত্র খেয়ে আবার আমার সারা শরীরে এলার্জি হয়েছিল। তখনও ওই হাসপাতালেই সেই অবস্থায় এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ বাদ দিয়ে তাঁর নির্দেশিত হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে আসতে পারলাম। আসলে আমার বেশিরভাগ এলোপ্যাথিক ওষুধ সহ্য হয না বরং উল্টো প্রতিক্রিয়া হয় । তাই ওনার নির্দেশ ছিল কোন এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ নয় বরং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতে হবে এবং তিনিই তা করবেন। ওঁর সম্পর্কে বলা একবার শুরু করলে তা শেষ হবার নয়। সংক্ষিপ্ত এই পরিসরে কত-শত দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলবো তাই এখানেই সমাপ্তি টানছি। করুণাসাগর বিদ্যাসাগরের বংশের অনুসারী তো এমনই হবেন। হে সুজন মহাতাপস প্রণমি তোমায়!!